মালয়েশিয়ায় রিলোকেশন ৭ - চাকরি বদলানো

মালয়েশিয়ায় রিলোকেশন ৭ - চাকরি বদলানো

নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন পরিবেশ, নতুন শেখার স্কোপ - এইরকম নানা কারণে মানুষ চাকরি বদল করে থাকে। মালয়েশিয়ার চাকরির মার্কেটেও জব সুইচ খুবই সাধারণ একটা বিষয়, এমনকি ফরেনারদের জন্যেও। আজকের পর্বে আমি বলবো কিভাবে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে চাকরি বদল করবেন। যেহেতু মালয়েশিয়াতে আপনার ভিসা (বা এমপ্লয়মেন্ট পাস) কোম্পানির সাথে একসুতায় বাঁধা, সুতরাং এই কাজগুলো সতর্কতা ও সময়মত করাটা খুবই জরুরী।

নোটিশ পিরিয়ড ও রিজাইন লেটার দেওয়া

নতুন কোন কোম্পানি থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর প্রথম ও খুবই জরুরী একটা ধাপ হল আপনার নোটিশ পিরিয়ড বুঝে আপনার ম্যানেজার ও HR এর কাছে রিজাইন লেটার জমা দেওয়া। সাধারণত নোটিশ পিডিয়ড ১-৩ মাসের হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে কনট্রাক্ট ১-২ বছরের জন্যেও লকড-ইন থাকতে পারে। সুতরাং চাকরি বদলাতে হলে সবার আগে এইটুকু কনফার্ম করতে হবে যে আপনার রিজাইন লেটার এপ্রুভ হয়েছে এবং নোটিশ পিডিয়ড শেষে আপনি রিলিজ নিতে পারবেন। এই তারিখগুলা আপনার নতুন কোম্পানির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা তারাও তাদের দিক থেকে ডকুমেন্টস রেডি করবে আপনার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী।

তো মনে করুন, আপনি রিজাইন দিলেন অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখ এবং আপনার নোটিশ পিরিয়ড ২ মাস। অর্থাৎ নভেম্বর ১৫ থেকে আপনি আর পুরাতন কোম্পানির এমপ্লয়ী থাকছেন না। এখন আপনার কাজ হবে, পুরাতন কোম্পানির আন্ডারে রেজিস্টার করা EP (Employment Pass) ও DP (Dependent Pass) ক্যানসেল করা এবং নতুন কোম্পানির আন্ডারে সেগুলা রেজিস্ট্রেশন করানো। এই EP/DP ট্রান্সফার পদ্ধতিটা আমরা পাঁচটা ভাগে ভাগ করতে পারি।

১। অনলাইন ক্যানসেলেশন

এটাকে অনেক সময় সফট ক্যানসেলেশন-ও বলা হয়। পুরাতন কোম্পানি সাধারণত আপনার শেষ ওয়ার্কিং ডে-র ৩০ দিন আগে অনলাইনে আপনার EP/DP ক্যানসেল করে দিবে। কোম্পানি ভেদে এই সময়টা কমবেশী হতে পারে। অনলাইন ক্যানসেলেশন HR নিজেরাই MDEC/ESD এর ড্যাশবোর্ড থেকে কয়েক মিনিটেই করতে পারে। ক্যানসেল করার অর্থ হল আপনার ও ডিপেন্ডেন্টদের পাসপোর্ট নম্বর আর পুরাতন কোম্পানির সাথে Bind করা থাকছেনা। এখন নতুন যেকোন কোম্পানি আপনাদের পাসপোর্ট নম্বরগুলো নিজেদের সাথে Bind করে নিতে পারে। (প্রোগ্রামারদের মত Bind টার্ম ছাড়া বিকল্প কিছু পেলাম না হিহি!)

২। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন

এখন নতুন কোম্পানির দায়িত্ব হল আপনার হয়ে EP/DP এর জন্য আবেদন করা। সাধারণত কয়েকদিনের মাঝেই এই রেজিসট্র্রেশন কনফার্ম করা হয়। নতুন করে EP/DP আবেদন করতে বেশ কয়েকটি কাগজপত্র লাগে। সেগুলোর লিস্ট দিচ্ছি।

EP এর জন্য দরকারী কাগজপত্র

  • নতুন কোম্পানির সাথে অফার লেটার ও কনট্রাক্ট সাইন এগ্রিমেন্ট (এইটা নতুন কোম্পানিই আপনাকে দিবে)

  • ৩.৫ বাই ৫ সেমি সাইজের পাসপোর্ট ফটো (ব্যাকগ্রাউন্ড কালার নীল হতে হবে, ভিসার ছবির মত সাদা হলে হবেনা)

  • বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান এমব্যাসী থেকে সত্যায়িত করা শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (ব্যাচেলরস বা মাস্টার্স বা পিএইচডি'র সনদ)

  • পাসপোর্টের সকল পেজের স্ক্যান কপি (কভার সহ করে নিন ভাই)

  • লেটেস্ট eBE Assesment Acknowledgment ফর্ম (ট্যাক্স বিষয়ে জানতে এখানে দেখুন)

  • লেটেস্ট রেজিউম

  • রিলিজ লেটার (মাইরালা! এইটা নিয়ে পরে বিস্তারিত বলছি)

DP এর জন্য দরকারী কাগজপত্র

  • ৩.৫ বাই ৫ সেমি সাইজের পাসপোর্ট ফটো (ব্যাকগ্রাউন্ড কালার নীল হতে হবে, ভিসার ছবির মত সাদা হলে হবেনা)

  • বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান এমব্যাসী থেকে সত্যায়িত করা নিকাহ নামা, ম্যারেজ সার্টিফিকেট (স্ত্রীর) ও জন্মসনদ (সন্তানদের)

  • পাসপোর্টের সকল পেজের স্ক্যান কপি (কভার সহ করে নিন ভাই)

কাগজপত্র কিভাবে সত্যায়িত করবেন তা জানতে দেখুন এই লিংক: দরকারী কাগজপত্র

৩। ফিজিকাল ক্যানসেলেশন

নতুন কোম্পানি আপনার দেওয়া সকল কাগজপত্র অনলাইনে রেজিস্টার করে ফেললে MDEC/ESD তাদেরকে একটা Acknowledgement Letter দিবে। এবার আপনার পুরাতন কোম্পানির কাজ হল, আপনার ও আপনার ডিপেন্ডেন্টদের সকলের পাসপোর্টে ফিজিকালি ভিসা ক্যানসেলেশন স্ট্যাম্প করিয়ে নেওয়া। এই কাজের জন্য আপনার পুরাতন কোম্পানির HR কে নতুন কোম্পানির MDEC/ESD পোর্টাল থেকে পাওয়া Acknowledgement Letter এর কপি জমা দিতে হবে। আর সবার পাসপোর্ট তো সাথে দিতে হবেই (নইলে ক্যানসেলেশন সীল মারবে কিসে হেহে)।

এই কাজটা সাধারণত একদিনেই করা সম্ভব। করোনাভাইরাস রিলেটেড কারণে যদি অফিস বন্ধ থাকে বা অনলাইন এপয়ন্টমেন্ট সিস্টেম মেনে যেতে হয়, তাহলে সময় বেশী লাগতে পারে। মনে রাখবেন, ফিজিকাল ক্যানসেলেশন না হলে কোনভাবেই নতুন কোম্পানিতে আপনি চাকরি শুরু করতে পারবেন না, কিংবা তারাও কোন প্রকার ডকুমেন্ট প্রসেস করতে পারবেনা (সব কোম্পানিতে নিয়ম এরকম নয় যদিও)।

এনিওয়ে, ফিজিকাল ক্যানসেলেশন হয়ে গেলে পুরাতন কোম্পানি আপনাকে দুইটা জিনিস দিবে। এক, আপনার ও ডিপেন্ডেন্টদের পাসপোর্ট। দুই, মালয় ভাষায় একটি রিলিজ লেটার যেখানে উল্লেখ করা থাকবে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার, ফিজিকাল ক্যানসেলেশনের তারিখ ও ভিসার মেয়াদ। এই দুইটি জিনিসই আপনার পরবর্তী ধাপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪। রি-সাবমিশন বা পুনঃ এপ্লিকেশন করা

এতদিন পর্যন্ত আপনার EP/DP নতুন কোম্পানির আন্ডারে সফট রেজিস্টার্ড ছিল। এখন সময় হয়ে এল পরবর্তী স্টেপের জন্য। এই এপ্রুভাল পূরণ করতে আগের অংশে মেনশন করা দুইটি জিনিস আপনার নতুন কোম্পানির HR কে পাঠাতে হবে। জিনিস দুইটা হল, আপনার (সাথে ডিপেন্ডেন্টদেরও) ভিসা ক্যানসেলেশন পেজের স্ক্যান কপি এবং রিলিজ লেটার। এই দুটা ডকুমেন্ট পেলে নতুন কোম্পানি আপনার EP/DP এপ্লিকেশনটি পুনরায় সাবমিট করবে। এইটাকে অনেক সময় Stage-1 Approval ও বলা হয়ে থাকে। এই স্টেপটা একটু লম্বা সময় নিয়ে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায় স্টেজ ওয়ান এপ্রুভাল হওয়ার আগেই পুরাতন কোম্পানির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নতুন কোম্পানি চাইলে আপনার (সাথে ডিপেন্ডেন্টদেরও) জন্য স্পেশাল পাসের ব্যাবস্থা করতে পারে। স্পেশাল পাসের আপনাকে অতিরিক্ত কোন ডকুমেন্টস জমা দিতে হবেনা। শুধুমাত্র কোম্পানির পক্ষ থেকে একজন একটা চিঠি দিবে যেটায় উল্লেখ থাকবে যে আপনার EP/DP ওই কোম্পানির আন্ডারে প্রসেসিং এ রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে আপনার মালয়েশিয়া থাকার মেয়াদ ১ মাস বাড়ানো হোক। আপনি (এবং আপনার স্ত্রী, সন্তানরাও) সাইন করে দিলে বাকি ডকুমেন্টস নতুন কোম্পানিই প্রসেস করে আপনাকে স্পেশাল পাস নিয়ে দিবে। তবে স্পেশাল পাস নিতে হলে নতুন কোম্পানিকে আপনার ও ডিপেন্ডেন্টদের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।

৫। ফিজিকাল এন্ডোর্সমেন্ট

স্টেজ ওয়ান এপ্রুভাল হয়ে গেলে আপনি অফিশিয়ালি নতুন কোম্পানিতে বৈধভাবে কাজ করার অনুমতি পাবেন। সেই সাথে আপনার ও ডিপেন্ডেন্টদের পাসপোর্ট জমা দিয়ে নতুন পেজে ভিসা স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হবে। পাসপোর্টে স্টিকার লেগে গেলেই সব ল্যাঠা চুকে গেল। চাকরিটা ভিসাটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো, আর কেও আটকাতে পারবেনা!

আপনাদের বুঝবার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ স্টেপগুলা একটা ডায়াগ্রাম আকারে দিচ্ছি। তবে হ্যা, কোম্পানি ভেদে কিছু নিয়ম বা কাগজপত্র কমবেশী লাগতে পারে।

Malaysia Switch Job Flow

আশা করি বরাবরের মতই এই পোস্টটি আপনাদের কাজে লাগবে। ধন্যবাদ।